বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৬:০৪ অপরাহ্ন

সর্বশেষ সংবাদ :

বরিশালে রোগী নিহত ও পঙ্গু করনের পরেও সর্বরোগের ডাঃ মুন্সী মুবিনুল হক বহাল তবিয়তে

নিজস্ব প্রতিবেদক :: ডা. মুন্সী মুবিনুল হক।বরিশাল সিভিল সার্জন কার্যালয়ে মেডিকেল অফিসার পদে কর্মরত। ২০১৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর যোগদান করেন ।রহস্যজনক কারনে তার কোন বদলী হয়না।বরিশাল তার কাছে যেন মধুর চাক ।বাড়ি ঝিনাইদহ হলেও বরিশাল থেকে প্রতিমাসে অর্ধকোটি টাকা আয় করেন ।দু রোগীকে হত্যা এবং সুন্নতে খতনা করতে গিয়ে এক শিশুকে দু দু’বার অস্ত্রোপচার করা হয়। মুন্সী মুবিনের বড় কারিশমা তিনি চোখের রোগী থেকে সিজার।সিজার থেকে সার্জারী সব রোগের ডাক্তার তিনি।দালাল নির্ভর হাসপাতালে বসে অপারেশনের নামে তিনি কাটাছেড়া করেন ।কেউ মারা যান ,কেউ করেন পঙ্গুত্ববরন।সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কর্তা বলে তাকে নিয়ে কেউ মুখ খুলতে চাননা।দালাল নির্ভর হাসপাতাল,ডায়াগনস্টিক ল্যাবগুলোই তার এখন আয়ের উৎস।সম্প্রতি নিজেই একটি ভবন স্থাপন করে হাসপাতাল গড়তে যাচ্ছেন। এ্যাম্বুলেন্স,অটোর রোগীধরা দালাল ও দালাল নির্ভর ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মাধ্যমে রোগী সংগ্রহ করে সুস্থ্য মানুষকেও করেন অপারেশন।অপারেশন মানেই টাকা।এই মুন্সীর কাছে মানুষ খুন হলেও কেউ কথা বলেনা। কারন তার পিছনে রয়েছে রাঘববোয়াল নামের দালালরা। মুন্সী মুবিনের অপকর্মের শেষ নাই।বেড়িয়ে আসছে একের পর এক অপকর্ম। মুন্সী মুবিন।তার কোন বিশেষ বিষয়ের বিশেষজ্ঞডিগ্রী নাই। অথচ তিনি সব রোগের ডাক্তার।দালালরা রোগীদের বাগিয়ে আনেন যে বিষয়ের ডাক্তার বলে তখন তিনি দালালদের কথা মত সে বিষয়ের ডাক্তার।

দু রোগীকে হত্যা:

২০২২ সালের ২৮ এপ্রিল সন্ধ্যায় ব‌রিশাল নগ‌রের সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ চৌমাথা সংলগ্ন সেন্ট্রাল হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সুস্থ্য রোগী রুবিকে সিজারের জন্য নেয়া হয় অপারেশন থিয়েটারে।সিজার করান কথিত স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ মুন্সী মুবিন।অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হয়ে মুন্সী মুবিন বললেন রোগী মারা গেছে তবে বাচ্চাটি সুস্থ্য আছে।ভুল সিজারের কারনে মারা যায় রুবী। তখন হাসপাতালটির স্টাফদেরকে গনধোলাই দেয় রুবীর স্বজনরা।গনধোলাইর এক ফাঁকে সেন্ট্রাল হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যায় ডাঃ মুন্সী মুবিনুর রহমান।

রুবির দেবর সুমন সিকদার বলেন, আমার ভাবি রুবি আক্তার গর্ভবতী ছিলেন। ২০২২ সালের ২৮ এপ্রিল সকালে ব্যথা ওঠায় সকাল ৮টায় ভর্তি করা হয়। সন্ধ্যা ৬টায় ব‌রিশাল জেলা সি‌ভিল সার্জন কার্যাল‌য়ের মে‌ডিকেল অফিসার ডা. মুন্সী মুবিনুল হক সিজার করার জন্য অপারেশন থিয়েটারে প্রবেশ করে। কিছুক্ষণ পরই বের হয়ে জানান ভাবি মারা গেছে। তবে বাচ্চা সুস্থ আছে। কিন্তু অপারেশন থিয়েটারে প্রবেশের আগে ভাবি পুরোপুরিই সুস্থ ছিল। ভাবি কিভাবে মারা গেছে সেটা জানতে চাইলে আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে। পাশাপাশি যে পরীক্ষাগুলো দেওয়া হয়েছিল সেই পরীক্ষার রিপোর্টগুলোতে তারিখ দেওয়া রয়েছে ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। অথচ আমা ২৮ এপ্রিল ২০২২ তারিখ রিপোর্ট গুলো করাই। এর প্রতিবাদ করলে আমাদের আটকে মারধর করা হয়। বিষয়টি স্থানীয়রা টের পেয়ে আমাদের উদ্ধার করে এবং হাসপাতালের স্টাফ ও ডাঃ মুন্সী মুবীনকে গণধোলাই দেয়। এরপরেই হাসপাতালের সকলে পালিয়ে যায়।প্রত্যক্ষদর্শী জাহাঙ্গীর আলম তখন বলেছিলেন , রোগীর স্বজন ও হাসপাতাল স্টাফদের মারামারির পর স্বজনদের কয়েকজন হাসপাতালে ইট নিক্ষেপ করে। কিছুক্ষণ পর হাসপাতালের স্টাফরা পালিয়ে যায়।ঐ ঘটনার পরে হাসপাতালে আর কোন রোগী যায়নি। এ ভাবে বরিশাল নগরীর সদর রোডে দালার নির্ভর ক্লিনিক মোকলেসুর রহমান ক্লিনিকে মুন্সী মুবীনের হাতে অপারেশন করার সময় এক রোগী মারা যায়।

মুন্সী মুবীন করেন খৎনাও:
সর্বরোগের ডাক্তার মুন্সী মুবীনের ভুল অস্ত্রোপচারে অসহ্য যন্ত্রণার শিকার হয়েছেন বরিশাল নগরী বাসিন্দা শিশু ওমর আব্দুল্লাহ (৫)। ঐ শিশুর সুন্নাতে খতনার স্থান ভালোভাবে সেলাই না করা,ভুল অস্ত্রোপচার, অবশের ইনজেকশন দেয়ার পর যথা সময়ে অস্ত্রোপচার না করার কারনে দু দু’বার শিশুটিকে অস্ত্রোপাচার করা হয়।২০২৩ সালের ১৩ জুলাই এ ঘটনা ঘটে।

শিশুর পিতা শাহীন হাসান বলেন, ছেলের সুন্নাতে খতনার জন্য বরিশাল মেট্রোপলিটন হাসপাতালে যান। ওই হাসপাতালের অস্ত্রোপচার কক্ষে নিয়ে অস্ত্রোপচারের স্থান অবশ করতে ইনজেকশন দেওয়া হয়। ইনজেকশন দেওয়ার আধা ঘণ্টা পর অস্ত্রোপচার কক্ষে আসেন চিকিৎসক মুন্সী মুবিনুল ইসলাম। তিনি কোনোকিছু না জেনেই অস্ত্রোপচার শুরু করেন। অবশ থাকার সময় পার হওয়ার কারণে অস্ত্রোপচারের সময় যন্ত্রণায় চিৎকার চ্যাঁচামেচি শুরু করে শিশু ওমর। শিশুর যন্ত্রণার বিষয়টি আমলে না নিয়ে কোন ভাবে অস্ত্রোপচারের স্থান সেলাই দিয়ে পাঠিয়ে দেন। পরে শিশু ওমরকে বাসায় নেওয়ার পর দেখা যায় সুন্নাতে খতনার স্থানে ঠিকমতো সেলাই দেওয়া হয়নি। তখন শিশুকে ফের হাসপাতালে আনা হয়। এভাবে দু দদু’বার হাসপাতালে আনার কারনে আমার পুত্র ওমর মানসিকভাবে আতংকিত হয়ে পড়ে।সাধারন একটি সুন্নতে খাতনার জন্য বারবার শিশুটিকে অস্ত্রোপচার করা হয়।

সর্ব রোগের চিকিৎসক ডাঃ মুন্সী মুবিনুল হক:

ডাঃ মুন্সী মুবিনুল হক বরিশাল সিভিল সার্জন কার্যালয়ে মেডিকেল অফিসারের পদে কর্মরত।নিয়মিত অফিস না করলেও তিনি নিয়মিত চেম্বার করছেন নগরীর দালাল নির্ভর ক্লিনিকগুলোতে। অপারেশন করান মোকলেসুর রহমান ও মেট্রোতে। তিনি মূলত কোন বিষয়ের বিশেষ ডিগ্রী প্রাপ্ত ডাক্তার না হলেও রোগী দেখছেন গাইনী,সার্জারী,চক্ষু,নিউরো, বাত ব্যাথা, গ্যাস্ট্রোলিভার, চর্ম ও যৌন রোগসহ সব রোগের। দালালরা তাকে ‘সর্ব রোগের চিকিৎসক’ পদবি দিয়েছেন। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঐসব প্রতিষ্ঠানে বসে তিনি দালালদের আনা রোগীদের সর্ব রোগের চিকিৎসা দেন। তার নিজের ব্যক্তিগত তেমন কোনো রোগী নেই। সব রোগীই বিভিন্ন স্থান থেকে ভাগিয়ে নিয়ে আসে দালাল চক্র।

মুন্সী মুবিনুল হক এ সব দালালদের বেতন দিচ্ছে এবং কাউকে কমিশনের ভিত্তিতে টাকা দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল,সদর হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে শুরু করে আন্তঃবিভাগ সব জায়গায় সক্রিয় রয়েছে মুন্সী মুবীনের দালালচক্র। হাসপাতাল থেকে শুরু করে লঞ্চঘাট ও বাসস্ট্যান্ড থেকে মুন্সী মুবীন পর্যন্ত চারস্তরের প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে এসব দালাল। কোনো না কোনো ফাঁদে পড়ে দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীরা মুন্সী মুবিনের কাছে হচ্ছেন সর্বস্বান্ত।

এ ব্যাপারে বরিশালের সমাজ সচেতন নাগরিক হুমায়ুন কবির বলেন, দ্রুত ডাঃ মুন্সী মুবিনুল হকের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্ত মুলক ব্যবস্থা গ্রহন করবে স্বাস্থ্য বিভাগ বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এ ব্যাপারে ডাঃ মুন্সী মুবিনুল হক বলেন হ্যা আমার হাতেই সেন্ট্রাল হাসপাতালে রুবী নামে একজন রোগী মারা গেছে। সেতো বহু আগের কথা ।এ ছাড়া তিনি বলেন,সব ডাক্তাররাই দালার নির্ভর বলে অন্যসব প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে কল কেটে দেন।

 

 

সংবাদটি শেয়ার করুন ...




© All rights reserved ItihaasBarta