বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৬:৪৬ অপরাহ্ন

সর্বশেষ সংবাদ :

বিসিসি নির্বাচনে কালো টাকা ছড়ানোর গুঞ্জন, প্রার্থীদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের হিড়িক

নিজস্ব প্রতিবেদক :: আসন্ন বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে নগরীতে  টাকার ছড়াছড়ি চলছে। ইতিমধ্যে  প্রার্থীদের  প্রচারণা প্রায় সরগরম হয়ে উঠেছে ‌।কোন প্রার্থী নির্বাচনী ক্যাম্পও বসিয়েছেন বিভিন্ন এলাকায়। এতে প্রার্থীদের খরচ যেমন বেড়েছে, তেমনি ক্যাম্প পরিচালনায় বাড়তি অর্থও খরচ হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের ব্যয়, প্রার্থীর পোস্টার ছাপানো, পরিবহন, কাগজ, কালি, ছাপাখানার খরচ, এগুলো টানানো, ক্যাম্প সাজানো ও পরিচালনার কাজেও প্রচুর কালো টাকা খরচ করছেন।
সূত্র জানায়,   নির্বাচনে মেয়র পদে সাতজন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১১৯ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৪২ প্রার্থীসহ মোট ১৬৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। নির্বাচনে ১২৬টি কেন্দ্রে ২ লাখ ৭৬ হাজার ২৯৮ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।

সরেজমিনে  চায়ের দোকানে ঢুকে ‘ভোটের হালচাল’ নিয়ে জানতে চাইলে চা বিক্রেতা বলেন,  নির্বাচন  এইডা টাকার খেলা। যে বেশি টাকা দিয়া ভোট কিনতে পারব, জয় তারই।’
বিষয়টি পরিষ্কার করলেন চা পান করতে আসা একাধিক ব্যাক্তি  বললেন, ‘এ  কাউন্সিলর প্রার্থীরা দুই হাতে টাকা উড়াচ্ছেন। সকালে এক প্রার্থী এক হাজার টাকা দিলে, দুপুরে আরেকজন দিচ্ছেন দুই হাজার। রাতে অপর প্রার্থী দিচ্ছেন ওই দুই প্রার্থীর চেয়েও বেশি টাকা। প্রতিদিনই এ অবস্থা চলছে।
‘গত নির্বাচনেও অনেক ওয়ার্ডে টাকার খেলা হয়েছে। এবারও চলছে। এবার যে অবস্থা চলছে, তাতে মনে হচ্ছে ভোটের আগের রাতে রেট বেড়ে যাবে। যে প্রার্থী বেশি ভোট কিনতে পারবে, জয়ের পাল্লা তার দিকে যাবে। এদিকে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সমর্থক, কর্মী ও আত্মীয়রা দল বেঁধে প্রার্থীর হয়ে ভোটারদের ঘরে ঘরে যাচ্ছে। চলছে খানাপিনা, দেওয়া হচ্ছে নগদ টাকা, নানা উপঢৌকন।  প্রতিটি  ওয়ার্ডে একেক প্রার্থীর ব্যয় দুই-আড়াই কোটি টাকা  ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে স্থানীয়দের ধারণা।

এছাড়াও  আচরণবিধি উপেক্ষা করে প্রার্থীরা একাধিক নির্বাচনী অফিস, পোস্টার, লিফলেট ও মাইক ব্যবহার করছেন। মিছিল-শোডাউন ও শোভাযাত্রা করছেন। নানা বাহানায় ভোটারদের মাঝে টাকা ছড়াচ্ছেন। কর্মী-সমর্থকদের দামি খাবার দিচ্ছেন। নির্বাচনে অনেক প্রার্থীর বাজেট এক থেকে তিন কোটি টাকা পর্যন্ত।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, প্রার্থীরা এবারের নির্বাচনে যতটা না বৈধ টাকা খরচ করবেন তার চেয়ে বেশি খরচ করবেন কালো টাকা। কেননা বৈধভাবে ব্যয়ের সীমার অর্থ দিয়ে প্রার্থীদের কিছুই হবে না। ফলে তারা বাড়তি অর্থ খরচ করবেন এটাই স্বাভাবিক।

তারা বলেছেন, প্রার্থীরা নির্বাচনী হলফনামায় আয়-ব্যয়ের হিসাব যা দেখিয়েছেন তা বাস্তবের তুলনায় অনেক কম।

সূত্র জানায়, সবচেয়ে বেশি টাকা খরচ হবে কাউন্সিলর প্রার্থীদের।  কারণ এই সিটিতে কাউন্সিলর প্রার্থীদের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস মিলছে। অন্তত এখন পর্যন্ত পরিবেশ তেমনই আভাস দিচ্ছে। এছাড়াও  বিভিন্ন স্থানে সরকারি জমি সহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় নির্বাচনী কার্যালয় স্থাপন করা হয়েছে।

অপর একটি সূত্র জানায় ব্যাংক টাকা উত্তোলনের ক্ষেত্রে প্রার্থীদের প্রকাশ্যে দেখা না গেলেও তাদের স্ত্রী, আত্মীয়স্বজনরা নেতারা টাকা তুলছেন এবং নির্বাচনে খরচ করছেন।
সাধারণত যে কোনো নির্বাচনে নগদ টাকার ব্যবহার বাড়ে। এবারও বাড়তে পারে। নির্বাচনে কালো টাকার ব্যবহার বেশি হয়। সিটি নির্বাচনেও তাই হতে পারে।

সচেতন নাগরিকরা বলেন
প্রার্থীদের অতিরিক্ত টাকা ব্যয় প্রসঙ্গে বলেন, ‘ভোট কেনাবেচা বন্ধ না করা গেলে বা কালো টাকার প্রভাব বন্ধ না করা গেলে নির্বাচন অর্থবহ হয় না। নির্বাচন কমিশনের এ ব্যাপারে দায়িত্ব রয়েছে। তারা কঠোর নজরদারি ও পদক্ষেপ না নিলে নির্বাচনে টাকার প্রভাব বাড়তেই থাকবে। এটা বন্ধ হওয়া দরকার।’

নির্বাচন অফিসের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা  বলেন, ‘অতিরিক্ত খরচের অভিযোগ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তা ছাড়া প্রতিটি ওয়ার্ডে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করছে। তারাও বিষয়টি নজর রাখছে। ভোট কেনাবেচার বিষয়ে প্রমাণ পাওয়া গেলে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

সংবাদটি শেয়ার করুন ...




© All rights reserved ItihaasBarta