বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৬:৩৫ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক:: অবৈধ ভাসমান দোকান আর হকারদের দখলে রয়েছে বরিশাল লঞ্চঘাট এলাকা। লঞ্চঘাটের টার্মিনাল ও গাড়ীর পার্কি এলাকা অবৈধ দোকানদের দখলে থাকায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। তবে ঢাকা থেকে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বরিশাল সফরের ঘোষনা আসলেই দুই একদিনের জন্য দখল মুক্ত হয় বরিশাল লঞ্চ টার্মিনাল এলাকা। প্রতিদিন দুপুরের পরই লঞ্চ টার্মিনাল ও গাড়ী পার্কিং এলাকার বড় একটি অংশ জুড়ে বসে অবৈধ দোকানের পসরা। তবে ছোট লঞ্চঘাট এলাকায় প্রায় সারাদিনই থাকে এসব অবৈধ দোকানের পসরা । টার্মিনাল এলাকার পান-সিগারেট ও চায়ের দোকানের জটলার কারনে সব চেয়ে বেশি ভোগান্তি নারী ও শিশু যাত্রীদের। সিগারেট এর ধোয়া আর চায়ের দোকনের জটলার কারনে পল্টুন দিয়ে যাতায়াত করাই যেন মুশকিল এমন অভিযোগ যাত্রীদের।
দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের রাজধানী শহর ঢাকার সাথে যোগাগের সব চেয়ে প্রধান মাধ্যম নৌ-পথ। প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী বরিশাল লঞ্চঘাট দিয়ে যাতায়াত করে থাকে। আর আধুনিক এ নৌ-বন্দর থেকে প্রতিদিনই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। অভিযোগ রয়েছে, কিছু অসাধু নৌ-পুলিশ কর্মকর্তা এবং বিআইডব্লিউটিএর কর্মাকর্তাদের বিট মানি দিয়েই চলছে এসব অবৈধ দোকান। এ কারনেই এসব অবৈধ দোকানদের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন কোন কোন কর্মকর্তা। এসব অবৈধ দোকানের পাশাপাশি টার্মিনালে ও লঞ্চে লঞ্চে বিক্রি হচ্ছে অস্বাস্থ্যকর পানি। একটি চক্র লঞ্চঘাট এলাকার পথ শিশুদের ব্যবহার করে এ বানিজ্য চালাচ্ছে। কুড়িয়ে আনা পানির বোতলে ফের অস্বাস্থ্যকর পানি ভর্তি করে বিক্রি করছে পথশিশুরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বরিশাল আধুনিক নৌ-বন্দর এলাকার একতলা লঞ্চ টার্মিনাল এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে প্রায় দুই ডজন দোকান। বেশ কয়েক জন ব্যক্তি এসব অবৈধ দোকান পরিচালনা করে। আর ঢাকার লঞ্চঘাট এলাকার পল্টুন দখল করে অবৈধ দোকানগুলো পরিচালনা করে একটি সিন্ডিকেট। এখানে বসে প্রায় অর্ধশত দোকান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টার্মিনাল এলাকার এক অবৈধ দোকানদার জানায়, এসকল দোকান থেকে নৌ-থানা পুলিশ প্রতি মাসে প্রায় ৫/৭ হাজার টাকা করে উত্তোলন করে। টাকা না দিয়ে কেউ দোকান পরিচালনা করতে পারেনা বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতিনিয়ত একতলা ও ঢাকার লঞ্চ টার্মিনাল এলাকায় প্রায় ৭০/৮০টি দোকান বসে। মাসে প্রতিটি দোকান থেকে ৩/৪ হাজার টাকা করে উত্তোলন করলে প্রতি মাসে উত্তোলন হয় কয়েক লক্ষ টাকা। অবৈধ এসব দোকান থেকে উত্তোলনকৃত টাকার একটি অংশ বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তাদের পকেটেও যায় বলে অভিযোগ রয়েছে।
অপরদিকে লঞ্চঘাট বিআইডব্লিউটিএ অফিসের সামনে প্রায় ১০/১২ টির মত ফুচকা চটপটির গাড়ি বসে। এদের কাছ থেকেও মাসোহারা উত্তোলন করে বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা। সূত্র জানায়, ফুচকা ও চটপটির প্রতিটি দোকান থেকে তারা ৩ হাজার টাকা করে উত্তোলন করে।
এ বিষয়ে নিয়ে বরিশাল লঞ্চঘাটে কথা হয় মরিয়ম নামে এক নারী যাত্রীর সাথে। সে অভিযোগ করে বলেন-লঞ্চ টার্মিনালে যেভাবে সিগারেট বিক্রি হচ্ছে, আর কিছু যাত্রী যেভাবে ধোয়া উড়িয়ে পাবলিক প্লেসে ধুমপান করছে তাতে শিশু ও নারীদের টার্মিনাল দিয়ে লঞ্চে ওঠা খুবই কষ্টকর। তিনি বলেন-টার্মিনালের একটি অংশ জুড়ে দাড়িয়ে থাকে লঞ্চের কলম্যান। লঞ্চের সামনে থাকে অস্বাস্থ্যকর পানি নিয়ে দুই-৩শ বোতল নিয়ে দাড়িয়ে থাকে কিছু শিশু। আর বড় একটি অংশ জুড়ে থাকে অবৈধ দোকান। এরপর যাত্রীরা কিভাবে লঞ্চে উঠবে ? তিনি কতৃপক্ষের এ বিষয়ে নজর দেয়ার দাবী জানান। সরোয়ার নামে অপর এক যাত্রী বলেন- যেভাবে পল্টুনগুলো দখল করে আছে অবৈধ এসব হকার ও দোকানীরা তাতে পল্টুন দিয়ে চলাচল করা ঝুকিপূর্ন।
এসকল বিষয়ে জানতে নৌ-থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ আব্দুল জলিলের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।
লঞ্চ টার্মিনাল এলাকায় অবৈধ দোকান পাটের বিরুদ্ধে করনীয় বিষয়ে জানতে চাইলে বরিশাল বিআইডব্লিউটিএ’র বন্দর কর্মকর্তা জানান দোকানগুলো মানবিকতার খাতিরে এবং যাত্রীদের চাহিদা থাকে যার কারনেই লঞ্চ টার্মিনালের সামনের ফুচকা চটপটির দোকানগুলো বসতে দেয়া হয়েছে।দোকান থেকে কেউ টাকা উত্তোলন করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর টার্মিনালে যারা সিগারেট বিক্রি করে এসকল দোকানীদের কারণে যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাদের ব্যাপারে খুব দ্রুত ব্যবস্থা নিবেন।