বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৭:০৬ অপরাহ্ন

সর্বশেষ সংবাদ :

ভান্ডারিয়ায় সাইকেলের গতি থামাতে সাবেক চালকরা এবার নৌকায়

অনলাইন ডেস্ক:: পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ায় সাইকেলের গতি থামাতে সাবেক চালকরা এবার নৌকার হাল ধরেছেন। নৌকা দিয়ে সাইকেলের গতি থামানো গেলে ভাণ্ডারিয়ায় রাজনীতির নতুন মেরূকরণ ঘটবে। আগামী ১৭ জুলাই অনুষ্ঠিতব্য ভাণ্ডারিয়া পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে এমনটাই মনে করছেন অনেকে।

জাতীয় পার্টি (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু গত ৪০ বছরে যে প্রতীক নিয়ে মাঠে নেমেছেন, সেই প্রতীক জয়ী হয়েছে। তিনি ছয়বার পিরোজপুর-২ (ভাণ্ডারিয়া-কাউখালী-ইন্দুরকানী) আসনে এমপি হয়েছেন। তাঁর সাবেক সঙ্গীরা এবার পৌরসভা নির্বাচনে নেমেছেন নৌকা প্রতীক নিয়ে। তাই ভোটার কম হলেও উত্তাপ ছড়াচ্ছে ভাণ্ডারিয়ায়। ২০১৫ সালে গঠিত ভাণ্ডারিয়া পৌরসভার প্রথম নির্বাচন এটি। ১১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের পৌরসভায় ভোটার ২২ হাজার ৪১৫ জন। মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন পাঁচজন। জেপি মনোনীত মো. মাহিবুল ইসলাম মাহিম (সাইকেল) ও আওয়ামী লীগ মনোনীত মো. ফাইজুর রশিদ খসরুর (নৌকা) মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। দু’জন দৃশ্যমান প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও নেপথ্যে লড়ছেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপি এবং পিরোজপুর জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মহিউদ্দিন মহারাজ। মঞ্জুর চাচাতো ভাই মাহিম। তিনি ২০০৯ সালে ভাণ্ডারিয়া উপজেলার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। অন্যদিকে, নৌকার প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফাইজুর রশিদ ভোটের রাজনীতিতে নবীন। তবে তাঁর পক্ষে কাজ করছেন ভোটের মাঠে অভিজ্ঞরা। যারা একসময়ে মঞ্জুর পাশে ছিলেন। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নৌকার নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সবাই মঞ্জুর রাজনৈতিক শিষ্য। মহাজোট সরকারে মঞ্জু মন্ত্রী থাকাকালে তাঁর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ছিলেন মহিউদ্দিন মহারাজ। তখনই ধনাঢ্য হিসেবে উত্থান হয় তাঁর। তিনি ভাণ্ডারিয়ায় নৌকার নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের নিয়ে গঠিত আরেকটি কমিটির প্রধান হলেন জেপি থেকে বহিষ্কৃত ধাওয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান। তিনি মহারাজের ছোট ভাইয়ের শ্বশুর। মহারাজের আরও দুই ভাই উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিরাজুল ইসলাম এবং তেলিখালী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন হাওলাদার নৌকার নির্বাচন পরিচালনার অন্যতম কাণ্ডারি। ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন মেম্বাররাও। যারা একসময়ে জেপি করতেন।

 

কেন এই বিরোধ অনেকে বলছেন, মহারাজ পরিবারের উত্থান ঘটেছে মঞ্জুর হাত ধরে। মঞ্জুর সমর্থনেই ২০১৩ সালে স্বতন্ত্র নির্বাচন করে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। মিরাজুল ইসলাম ২০১৯ সালের উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হলেও নেপথ্যে সমর্থন দিয়েছেন মঞ্জু। তখন চাচাতো ভাই মহিবুল হোসেন প্রার্থী হলেও পারিবারিক বিরোধের জেরে মঞ্জু তাঁর পাশে ছিলেন না। ছয়টি ইউনিয়নের তিনটি করে চেয়ারম্যান পদ ভাগাভাগি করে নেয় জেপি ও আওয়ামী লীগ। দুই ভাই জেলা পরিষদ ও উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়ার পর স্থানীয় আধিপত্য নিয়ে মঞ্জুর সঙ্গে বিরোধ বাধে। জেপির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান তৈরিতে আওয়ামী লীগকে গোছাতে নামেন দুই ভাই। সর্বশেষ গত বছরের জেলা পরিষদ নির্বাচনে মহারাজ দলের মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। নির্বাচনের কয়েক দিন আগে তিনি মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন। স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, মনোনয়ন প্রত্যাহারে দলের কেন্দ্র থেকে চাপের জন্য জন্য মঞ্জুকে দায়ী করেন মহারাজ। এর পরই তিনি পিরোজপুর-২ (ভাণ্ডারিয়া-কাউখালী-ইন্দুরকানী) আসনে জেপির আধিপত্য দমনের মিশনে নামেন। যার বহির্প্রকাশ ঘটেছে গত ১৭ এপ্রিল। ওইদিন তেলিখালী ইউনিয়নের জুনিয়া গ্রামে জেপির ইফতার অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। ওই ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় উপজেলা জেপির সাধারণ সম্পাদক আতিকুল ইসলাম জুয়েলসহ ১০ নেতাকর্মী ১৫ দিন ধরে কারাগারে রয়েছেন। ওই ঘটনায় মহারাজ-মিরাজের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলায় দুই চেয়ারম্যানকে দল থেকে বহিষ্কার করে জেপি।

 

নদমুলা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মনিরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, উপজেলার সব চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা এক সময় জেপি করতেন। রমজানের ঘটনার পর তিনিসহ উপজেলা জেপির শতাধিক নেতা একযোগে পদত্যাগ করেছেন। তারা প্রত্যক্ষভাবে আওয়ামী লীগে যোগ না দিলেও পৌর নির্বাচনে জেপির বিরুদ্ধে লড়ছেন। দল ছাড়ার কারণ জানতে চাইলে মনিরুল ইসলাম বলেন, আতিকুল ইসলাম জুয়েলকে জেপির সাধারণ সম্পাদক করায় সবার আপত্তি ছিল। তাদের অভিযোগ, জুয়েল রাজাকারের ছেলে। তাদের আপত্তিতে জুয়েলকে পদ থেকে সরিয়েও দেওয়া হয়েছিল। মহারাজ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ হারালে ফের জুয়েলকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়, যা কেউ ভালোভাবে নেননি। আনোয়ার হোসেন মঞ্জু গত ৮ জুলাই বিকেল থেকে পরদিন বিকেল পর্যন্ত এবং তাঁর জামাতা ফরিদপুর-৪ আসনের সাংসদ যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নিক্সন চৌধুরী ৯ জুলাই ভাণ্ডারিয়ার বাসায় অবস্থান করেন।

 

নৌকার প্রার্থী খসরু অভিযোগ করেছেন, তারা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করছেন। মঞ্জু বুধবার থেকে ভাণ্ডারিয়ায় অবস্থান করবেন। এতে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে তারা শঙ্কিত। নিক্সন চৌধুরীকে বরণ করতে যাওয়া মোটরসাইকেল শোভাযাত্রায় সাইকেল মার্কার স্লোগান দেওয়া হয়েছে। সাইকেলের প্রাার্থী মাহিবুল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মঞ্জু তাঁর নিজের বাড়িতে এসেছেন। তিনি কোনো নির্বাচনী কাজে যুক্ত নেই। নিক্সন চৌধুরী শ্বশুরবাড়িতে দাওয়াতে এসে কয়েক ঘণ্টা থেকে চলে যান।

 

এসব বিষয়ে জানতে মহিউদ্দিন মহারাজকে ফোন দেওয়া হলে তা বন্ধ পাওয়া গেছে। উপজেলা চেয়ারম্যান মিরাজ একটি গণমাধ্যমকে বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনে জেপি মহাজোটের শরিক হিসেবে আওয়ামী লীগের সমর্থন পায়। এ কারণে মঞ্জু বারবার এখানে এমপি নির্বাচিত হচ্ছেন। জেপির সঙ্গে সমঝোতা করায় আওয়ামী লীগ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই দল শক্তিশালী করার পরিকল্পনায় দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে নেমেছেন। এখানে জেপিকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।

 

জেপির প্রবীণ নেতা ও সিনিয়র সহসভাপতি গোলাম সরোয়ার জোমাদ্দার বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে জেপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের ভালো সম্পর্ক যাচ্ছে না। আনোয়ার হোসেন মঞ্জু গত ৪০ বছরে দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে অবদান রেখেছেন। ভোটাররা তা কখনও ভুলবেনা।

 

 

সংবাদটি শেয়ার করুন ...




© All rights reserved ItihaasBarta