সোমবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৯ পূর্বাহ্ন

বরিশালে ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড!

নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশালে পেছনের তারিখ দেখিয়ে কমিটির করার অভিযোগ উঠেছে মহানগর ছাত্রলীগের বিলুপ্তকৃত কমিটির বিরুদ্ধে। এনিয়ে তুলকালাম কাণ্ড ঘটেছে বরিশালে।

 

জানা যায়, গত ১৫ মে মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। বর্তমানে বরিশাল ছাত্রলীগ কয়েকটি ভাগে বিভক্ত। এদের মধ্যে একটি গ্রুপ সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ অনুসারী। সদ্য বিলুপ্ত হওয়া কমিটির নেতৃত্বে তারাই ছিলেন। এছাড়া পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম ও নব-নির্বাচিত সিটি মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতের অনুসারী বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগের নেতাকর্মী রয়েছেন, যারা দীর্ঘদিন ধরে ছাত্র রাজনীতি করলেও ছিলেন কোনঠাসা।

 

গতকাল বুধবার রাত থেকে হঠ্যাত করে বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের আওতাধীন বিভিন্ন ওয়ার্ড ও কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কমিটির আহবায়ক, যুগ্ম আহবায়ক ও সদস্য সচিব সহ বিভিন্ন পদ প্রাপ্তির দাবী করে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেইসবুকে পোস্ট দেয় সাদিক আব্দুল্লাহ অনুসারী ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

 

আর ফেইসবুকে এসব পোষ্ট দেয়ার পরপরই বিভিন্ন ইউনিটের পদপ্রত্যাশী ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও (প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক ও নবনির্বাচিত মেয়র খোকন সেরনিয়াবাত অনুসারী) পাল্টা-পাল্টি পোষ্ট দিতে শুরু করেন। যা একপর্যায়ে ঘটে তুলকালাম কাণ্ড! এসব নিয়ে হাসিঠাট্টা করে একের পর এক ফেইসবুকে পোস্ট দিতেও দেখা গেছে বরিশালের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষকে।

 

সুত্র বলছে, গত বছরের ২১ অক্টোবর নগরীর ১ ও ২ নং এবং ২৮ অক্টোবর ৩ ও ৪নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের কমিটির অনুমোদন দেয় তৎকালীন মহানগর ছাত্রলীগ। আহবাক মোঃ রইজ আহমেদ মান্না, যুগ্ম আহবায়ক মোঃ মাইনুল ইসলাম ও মোঃ আরিফুর রহমান শাকিল স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ওই কমিটির কথা নিশ্চিত হয় গণমাধ্যম কিন্তু গত ১৫ মে মহানগর ছাত্রলীগের ওই কমিটি বিলুপ্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত আর নতুন ইউনিট কমিটি গঠন সংক্রান্ত কোন প্রেস বিজ্ঞপ্তি পায়নি গণমাধ্যম।

 

তবে সদ্য ফেইসবুকে আপলোডকৃত এ ইউনিট কমিটি কবে অনুমোদন হলো তা নিয়ে প্রশ্ন এখন ছাত্রলীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মাঝে। অভিযোগ উঠেছে পেছনের তারিখ দেখিয়ে বরিশাল মহানগরের বিভিন্ন ইউনিটের কমিটি গঠন করেছেন মহানগর ছাত্রলীগের সদ্য বিলুপ্ত হওয়া কমিটি।

 

বিষয়টি নিয়ে নব-গঠিত কমিটিতে পদ প্রাপ্তির দাবীকৃত বেশ কয়েকজনে সাথে কথা বলেছেন এ প্রতিবেদক। সরকারি ব্রজমোহন কলেজের সভাপতি দাবীকৃত এআর আকাশ বলেন,’আমাদের কমিটি গত ১০ মার্চ ঠিক করে রাখা হয়েছিলো। কিন্তু আপনারা জানেন যে ভাই (সাদিক আব্দুল্লাহ) নমিনেশন পায় নি, সে অনেকদিন ঢাকায় ছিলেন। সব মিলিয়ে একটা কঠিন সময় গেছে আমাদের জন্য। তাই কমিটি প্রকাশ হয় নি। এখন আমরা সেই আগের অনুমোদিত কমিটি ফেইসবুকে দিয়েছি তা দেখে অনেকের সহ্য হচ্ছে না।’

 

আগের অনুমোদিত কমিটি হঠ্যাৎ এখন কেন প্রকাশ করা হচ্ছে এমন প্রশ্নে কোন সদোত্তর দিতে পারেননি তিনি।

 

আপনার কমিটির সদস্য সচিব কে? ১৬নং ওয়ার্ডের আহবায়ক কমিটির সদস্য মারুফের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ভাই আমি অতো কিছু জানিনা, আমি শুধু জানি আমি এই কমিটির সদস্য।

 

এক গণমাধ্যমকর্মী বলেন, হঠাৎ রাতে ফেইসবুকে দেখতে পাই একের পর এক কমিটির পদ পেয়েছে দাবী করে ফেইসবুকে আপলোড দেয়া হয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডের দেখি কেউ লিখছেন সভাপতি পেয়েছেন আবার কেউ লিখছেন আহবায়ক পেয়েছেন। বিএম কলেজে এ পর্যন্ত অন্তত ১০জন আহবায়ক/সভাপতি হয়েছেন বলে পোস্ট দেয়া হয়েছে ফেইসবুকে। তবে এসব কমিটির অনুমোদনের কোন কাগজ কেউ পোস্ট করতে পারেনি। গণমাধ্যমকর্মীদেরও এরা কেউ এবিষয়ে নিশ্চিত করেনি।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহানগর ছাত্রলীগের এক কর্মী জানান, আমার ভাই আগের কমিটিতে আমাদের ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এবার তিনি সভাপতি পদ প্রত্যাশি ছিলেন কিন্তু তাকে পদ না দিয়ে জুনিয়র একজনকে আহবায়ক করা হয়েছে এমনি তাকে কমিটিতেও রাখা হয় নি। যদি এসব কমিটি আগেই কথা থাকতো তাহলেতো আমার ভাই আহবায়ক পদ পেতো। কিন্তু গত সিটি নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ’র সাথে কাজ করার জন্য তাকে কমিটিতেই রাখা হয় নি।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহানগর ছাত্রলীগের পদ প্রত্যাশি এক নেতা বলেন, সম্পূর্ণ অসাংগঠনিকভাবে কাজটি করা হয়েছে, বিলুপ্ত হওয়া কমিটি কোনদিন কমিটি অনুমোদন দিতে পারেনা, এখন তারা নিজেদের শক্তিশালী দেখাতে পেছনের তারিখ দিয়ে কমিটি অনুমোদন করেছেন। যারা বিভিন্ন পদ-পদবীর দাবী করছেন তারা বেশিরভাগই অযোগ্য। এমনটি ১৬নং ওয়ার্ডে জামাত আমীরের ভাতিজাকে করা হয়েছে যুগ্ম আহবায়ক! একেবারে হাঁসি পাত্র বানিয়ে ফেলেছে বরিশাল ছাত্রলীগকে।

 

ছাত্রলীগের ওই নেতা আরও বলেন, যেহেতু বিষয়টি অসাংগঠনিকভাবে হয়েছে সেহেতু আমরা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দিকে তাকিয়ে আছি তারা আমাদের যে সিদ্ধান্ত দিবেন তাই মেনে নিবো।

 

বিষয়টি নিয়ে মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জসীম উদ্দীনের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি না হলেও সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য অসীম দেওয়ান বলেন, এভাবে কোন সাংগঠনিক কাজ হতে পারে না। কমিটি হলে সেটির প্রেস বিজ্ঞপ্তি থাকবে, প্যাডে কমিটি দেয়া হবে কিন্তু কিছুই দেখা গেল না, সম্পূর্ণ অসাংগঠনিকভাবে কাজটি করা হলো এবং এসবের কোন ভিত্তি নেই, যারাই করেছেন তারা মনগড়া করেছেন। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক আমি এর তিব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

 

মহানগর ছাত্রলীগের বিলুপ্ত হওয়া আহবায়ক কমিটির আহবায়ক রইজ আহমেদ মান্না ও যুগ্ম আহবায়ক মাইনুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকাবার রিং দিলেও তারা রিসিভ করেনি। তবে রইজ আহমেদ মান্না তার ফেইসবুকে লিখেছেন, সব খোলাশা হয়ে যাবে কোনটা জেনুইন আর কোনটা ভুঁয়া। দয়া করে কেহ ছাত্রলীগ নিয়ে তামাশা করোনা।

অন্যদিকে গত ১০ জুলাই কয়েকটি গণমাধ্যমে ‘বরিশালে ব‌্যাক ডেটে ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের পায়তারা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিলো। যা নিয়েও নানা আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছিলো নগড়জুড়ে।

 

 

সংবাদটি শেয়ার করুন ...




© All rights reserved ItihaasBarta