সোমবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:১০ পূর্বাহ্ন

বরিশালে রাতের আঁধারে জাটকা পাচার, নিধন রুখতে নেই কোন সফল অভিযান

নিজস্ব প্রতিবেদক :: দেশের ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর পুষ্টি চাহিদা পূরণ, কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য বিমোচন ও রপ্তানি আয়ে মৎস্য খাতের অবদান সর্বজনস্বীকৃত। আর এ সম্পদ রক্ষায় প্রতিবছরই সরকার নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে আসছে। সংশ্লিস্ট অধিদপ্তরকে সেনুযায়ী নির্দেশনা ও বাস্তবায়নে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

 

তবে নির্দেশনা থাকলেও সেটি বাস্তবায়নে গাফিলতি দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। এতে জাতীয় এ সম্পদ রক্ষার পরিবর্তে সেটিকে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে অসাধু চক্রের মদদ দাতারা। মূলত নিজেদের স্বার্থ হাসিল ও একটি চক্রকে সুবিধা দিতে দায়িত্ব অবহেলায় জড়িয়ে পড়ছেন তারা। এতে ক্ষতিসাধণ হচ্ছে সরকারের।

 

সরকার প্রতিবছর জাটকা নিধন রুখতে মৎস্য অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট প্রসাশনকে নানাবিধ দিক-নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। অথচ সেটিকে উপেক্ষা করে নির্দেশনা বাস্তবায়নের পরিবর্তে জাটকা নিধনে জড়িতদের পক্ষ নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। যার ফলস্বরুপ জাটকা নিধন রুখতে পুরোপুরি ব্যর্থ হচ্ছে মৎস্য অধিদপ্তর।

 

বরিশালে মৎস্য অধিদপ্তর সহ প্রসাশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এমন ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন।

 

জানা গেছে, প্রতিদিনই বরিশাল থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে বিপুল পরিমানে জাটকা পাচার হচ্ছে। তবে সংশ্লিস্টদের পক্ষ থেকে কোন আভিযানিক তৎপরতার দেখা মিলছে না। এজন্য সফল অভিযানের চিত্রের বিপরীতে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে তাদের ব্যর্থতামুলক কর্মকান্ড। উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনা ম্লান হচ্ছে।

 

অভিযোগ রয়েছে ব্যবসায়ীরা কিছু অসাধু মৎস্য কর্মকর্তা ও নৌ পুলিশ কে প্রতি মাসে মাসোয়ারা দিয়ে ম্যানেজ করে অবাধে জাটকা পাচার করে চলেছে। আর মাঝে মাঝে কোস্টগার্ড কিছু জাটকা বিরোধী অভিযান চালালেও মৎস্য কর্মকর্তারা থাকেন একবারে নীরব ভূমিকায়। অপরদিকে নৌ পুলিশ একটি অভিযান পরিচালনা করে জাটকা অন্যান্য মাছসহ একটি ট্রাক আটক করে, পরবর্তীতে অভিযানের মাছ বিতরণ নিয়েও রয়েছে নানা ধরনের বিতর্ক।

 

অভিযোগ রয়েছে, প্রসাশনের অসাধু কর্মকর্তারা অবৈধ জাটকা ইলিশ পাচারে বিভিন্ন পরিবহন ও নৌ পথে ট্রলার বা লঞ্চ থেকে মোটা অংকের মাসোহারা নিয়ে পাচার কাজে সাহায্য করছেন। বিভিন্ন সময়ে মৎস্য কর্মকর্তাদের তথ্য দিয়ে সহায়তা করলেও তারা অভিযান পরিচালনা করতে অস্বীকৃতি জানান।

 

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, বরগুনার আমতলী, তালতলী ও পটুয়াখালীর কলাপাড়া, মহিপুর, কুয়াকাটা ও আলীপুরের থেকে আসা বিভিন্ন পরিবহন করে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকা জাটকা ইলিশ মাছ সাতক্ষীরা ,খুলনা, ভোলাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাচার হচ্ছে । সরকার যখন জাটকা ইলিশ রক্ষা করার জন্য কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছে ,ঠিক তখনি সরকারে সেই কথাকে তোয়াক্কা না করে হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতিমাসে লক্ষ লক্ষ টাকা।

 

বরিশাল পোর্টরোডের এক মৎস্য ব্যবসায়ী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জানান, দক্ষিনঞ্চল থেকে আসা বেপারী,মেঘনা,অন্তরা,সুগন্ধা, চাকলাদার , ডলফিন পরিবহন সহ বেশ কিছু পরিবহন ও ট্রাকে করে আসে অবৈধ জাটকা ইলিশ। আর সেই জাটকা না ধরার জন্য প্রতিমাসে গাড়ি প্রতি মৎস্য কর্মকর্তা, নৌ পুলিশ অন্যান্য কর্মকর্তাদের হাজার টাকা করে মাসোহারা দিতে হয়। তিনি আরো অভিযোগ করে বলেন, টাকা দিয়ে সবাইকে ম্যানেজ করতে হয়।

 

সূত্রে আরও জানা গেছে, ১ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া জাটকা সংরক্ষণ কার্যক্রম চলবে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত। এই ৮ মাসের মধ্যে ৯ ইঞ্চি ছোট জাটকা ইলিশ পরিবহন ও ক্রয়-বিক্রয় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে মৎস্য অধিদফতর। এ আইন অমান্য করলে ৫ হাজার টাকা জরিমানা বা ২ বছরের জেল অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান আছে।

এদিকে জাটকা নিধন ও সহায়তা করছে তাদের কঠোরভাবে দমন করা দরকার। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের ছাড় দেয়া উচিৎ হবে না বলে ধারনা সচেতন মহলের। ইলিশের উৎপাদন ব্যাহত করে যারা সাময়িক লাভের জন্য শত শত টন জাটকা নিধন করে এবং যারা এই জাটকা নিধনে সহযোগীতা করতে নিজ কর্তব্য ভুলে আছে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ সাধারন মানুষের।

 

এদিকে নৌ পুলিশ বরিশাল অঞ্চলের পুলিশ সুপার কফিল উদ্দিন জানান, তথ্য পেলে অভিযানে পরিচালনা করা হয়। তবে অভিযানের মাছ বিতরণে বিতর্কের বিষয় জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।

 

বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নৃপেন্দ্র নাথ বিশ্বাস বলেন, আমাদের অফিসিয়াল কাজের জন্য অনেক সময় ব্যস্ততা থাকে। তারপরও সঠিক তথ্য থাকলে আমরা অভিযান পরিচালনা করে থাকি। আপনারাও  অভিযান পরিচালনা করার জন্য আমাদের তথ্য দিয়ে সহায়তা করবেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন ...




© All rights reserved ItihaasBarta